বাংলাদেশ

[বাংলাদেশ][bleft]

ব্লগ

[Blog][bleft]

ধর্ম

[Islam][bleft]

টিপস ও ট্রিকস

[টিপস ও ট্রিকস][bsummary]

ব্যাবসা বানিজ্য

[business][twocolumns]

Top Menu

১ মে

ব্লগ

5-latest-800px-slider

Sections

[কবিতা][bleft]

ব্লগ

5-latest-800px-composition1

Comments

4-comments

কবিতা

4-latest-400px-bloglist

Popular Posts

বাতু কেভ ৩৪০ সিড়ি।

 

বাতু কেভ ৩৪০ সিড়ি 


ছবি: বাতু কেভ ৩৪০ সিড়ি।

ভুমিকা: বাতু কেভ মালয়েশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র এবং হিন্দু ধর্মীয় তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। এটি কুয়ালালামপুরের উত্তরে অবস্থিত একটি চুনাপাথরের পাহাড়, যার মধ্যে বেশ কিছু গুহা ও মন্দির রয়েছে। এই গুহা-মন্দিরটি মূলত মুরুগান দেবতাকে উৎসর্গ করা হয়েছে, যিনি তামিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত পূজ্য।


বাতু কেভ মালয়েশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত ও জনপ্রিয় পর্যটন এবং ধর্মীয় কেন্দ্র। এটি মূলত কুয়ালালামপুর শহরের উত্তরে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং একটি প্রাকৃতিক চুনাপাথরের গুহা যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত।

বাতু কেভের ইতিহাস:

বাতু কেভের ইতিহাস প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বছর পুরোনো। প্রথম দিকে গুহাগুলো আদিবাসী উপজাতিরা আশ্রয়ের জন্য ব্যবহার করত। পরবর্তীতে ১৮৫৯ সালে, এটি একটি খ্যাতনামা ব্রিটিশ এক্সপ্লোরার উইলিয়াম হর্নাডে আবিষ্কার করেন। তামিল হিন্দু ব্যবসায়ী কে. থাম্বুসামি পিল্লাই ১৮৯০ সালে গুহাগুলোকে একটি হিন্দু মন্দির হিসেবে গড়ে তোলার ধারণা দেন এবং মূল গুহা-মন্দিরটি মুরুগান দেবতার প্রতি উৎসর্গ করেন।

বাতু কেভের গঠন ও প্রধান গুহাগুলো:

বাতু কেভ একটি চুনাপাথরের গঠন যা প্রায় ১০০ মিটার উঁচু। এতে তিনটি বৃহৎ এবং বেশ কয়েকটি ছোট গুহা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুহাটি হল ক্যাথেড্রাল বা টেম্পল কেভ, যা মূল মন্দির এবং তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। গুহাটির উচ্চতা প্রায় ১০০ মিটার এবং এর মধ্যে বিশাল আকারের একটি খোলামেলা জায়গা রয়েছে, যেখানে মুরুগান দেবতার মূর্তি স্থাপিত রয়েছে।


৩৪০ সিঁড়ির বিশেষত্ব:

বাতু কেভে পৌঁছানোর অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল ৩৪০ ধাপের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা। এই সিঁড়ির একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে গুহামন্দিরে প্রবেশের জন্য, যা একাধারে দর্শনার্থী এবং পূণ্যার্থীদের জন্য শারীরিক ও আধ্যাত্মিক এক পরীক্ষা।

১.সিঁড়ির সংখ্যা ও প্রকৃতি: এই সিঁড়িগুলো প্রধান গুহার মুখ পর্যন্ত নিয়ে যায় এবং সেগুলো বেশ খাড়া। সিঁড়ির প্রতিটি ধাপে ধীরে ধীরে মন্দিরের দিকে অগ্রসর হতে হয়। এর সঙ্গে অনেকেই শারীরিক এবং মানসিক ধৈর্য পরীক্ষা করেন। যারা শারীরিকভাবে সক্ষম, তাদের জন্য এই সিঁড়িগুলো পাড়ি দেওয়া তেমন কঠিন নয়, কিন্তু বয়স্ক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য এটি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

২.আধ্যাত্মিক গুরুত্ব: তামিল হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে বাতু কেভে যাওয়া এবং এই ৩৪০ ধাপের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা একধরনের তীর্থযাত্রা। এই যাত্রা শারীরিকভাবে যেমন কষ্টকর, তেমনই আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতিদায়ক বলে মনে করা হয়। তামিল হিন্দুদের জন্য বিশেষ করে, এটা একধরনের পাপ মোচনের প্রতীক।

৩.থাইপুসাম উৎসবের সময়: প্রতি বছর হাজার হাজার পূণ্যার্থী থাইপুসাম উৎসবের সময় বাতু কেভে আসেন। এ সময় পূণ্যার্থীরা নিজেদের শরীরে 'কাভাদি' নামক কাঠামো বহন করেন এবং সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠেন। এটা একধরনের কঠোর শারীরিক ও মানসিক তপস্যা বলে মনে করা হয়।

৪.সিঁড়ির রঙিন রূপ: সম্প্রতি, বাতু কেভের এই সিঁড়িগুলোকে বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙে রাঙানো হয়েছে, যা আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পর্যটকদের কাছে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ছবি ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়।

৫.বানরের উপদ্রব: বাতু কেভের ৩৪০ ধাপের সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় এক অসাধারণ দৃষ্টিকোণ হলো সিঁড়ির আশেপাশে বানরের উপস্থিতি। এই বানরগুলো সিঁড়ির চারপাশে ঘুরে বেড়ায় এবং অনেক সময় খাবারের খোঁজে পর্যটকদের ব্যাগ বা হাত থেকে কিছু ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে, এদের সঙ্গে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।


টেম্পল কেভ: টেম্পল কেভ বা মন্দির গুহা বাতু কেভের প্রধান আকর্ষণ। এই গুহায় প্রবেশ করতে হলে পর্যটক ও পূণ্যার্থীদের ৩৪০ ধাপের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। গুহার মধ্যে প্রাচীন হিন্দু মন্দির এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি রয়েছে, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক হিন্দুদের জন্য অত্যন্ত পূজ্য।

ডার্ক কেভ: টেম্পল কেভের নিচে অবস্থিত ডার্ক কেভ একটি প্রাকৃতিক গুহা যেখানে অনেক বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে। গুহাটির ভেতরটি অন্ধকার এবং এখানে বিশেষ গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে। এই গুহায় বিশেষ ধরনের বাদুড় এবং বিরল অঙ্কা মাকড়সা পাওয়া যায়।

আর্ট গ্যালারি কেভ এবং মিউজিয়াম কেভ: টেম্পল কেভের নিচের দিকে রয়েছে আর্ট গ্যালারি কেভ এবং মিউজিয়াম কেভ। এখানে হিন্দু দেব-দেবীর বিভিন্ন মূর্তি, চিত্রকর্ম এবং প্রদর্শনী রয়েছে। এ দুটি গুহা মূলত হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী এবং ধর্মীয় চিত্রাবলীর মাধ্যমে দর্শনার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করে।


সিঁড়ি ও মুরুগান দেবতার মূর্তি:

বাতু কেভের অন্যতম বিখ্যাত অংশ হলো এর ৪২.৭ মিটার উঁচু মুরুগান দেবতার সুবর্ণ মূর্তি। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মুরুগান দেবতার মূর্তি এবং ২০০৬ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়। মূর্তিটি সম্পূর্ণ সোনার রঙে রাঙানো এবং এটি মন্দিরের সামনে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর পাশেই রয়েছে সেই বিখ্যাত ৩৪০ ধাপের সিঁড়ি, যা গুহার মুখ পর্যন্ত পৌঁছায়।


থাইপুসাম উৎসব:

বাতু কেভ মূলত হিন্দু ধর্মীয় উৎসব থাইপুসাম উপলক্ষে অত্যন্ত বিখ্যাত। থাইপুসাম হলো এক ধরনের পূজার অনুষ্ঠান যা তামিল হিন্দুরা পালন করে। প্রতি বছর হাজার হাজার পূণ্যার্থী এবং পর্যটক এই উৎসবে যোগ দিতে বাতু কেভে আসেন। পূণ্যার্থীরা মুরুগান দেবতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন তপস্যা করে, যার মধ্যে শরীরের মধ্যে ধারালো বস্তু গেঁথে 'কাভাদি' বহন করার ঐতিহ্যও রয়েছে। তারা বিশ্বাস করেন যে এইভাবে তপস্যা করলে তাদের পাপ মোচন হয় এবং দেবতার আশীর্বাদ লাভ হয়।

 


পর্যটনের গুরুত্ব:

বাতু কেভ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি একটি পর্যটনকেন্দ্রও বটে। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসে এর অনন্য স্থাপত্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধন দেখতে। বাতু কেভের সিঁড়ির আশেপাশে রঙিন সাজানো হয়েছে যা একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

 

বানরের উপস্থিতি:

বাতু কেভের সিঁড়ি এবং আশেপাশে প্রচুর বানর রয়েছে। তারা প্রায়শই পর্যটকদের ব্যাগ, খাবার বা পানীয় চুরি করার চেষ্টা করে। অনেক পর্যটক এই বানরদের সাথে আনন্দ করে এবং ছবি তুলতে পছন্দ করে। তবে, বানরদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন, কারণ তারা হঠাৎ আক্রমণাত্মক হতে পারে।


উপসংহার:

বাতু কেভের ৩৪০ ধাপের সিঁড়ি কেবল একটি শারীরিক চ্যালেঞ্জ নয়, এটি আধ্যাত্মিক তপস্যারও একটি প্রতীক। যারা এই সিঁড়ি পাড়ি দেন, তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ধর্মীয় অনুভূতি এবং ইতিহাসের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

বাতু কেভ শুধুমাত্র মালয়েশিয়ার একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়, এটি তামিল হিন্দুদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় তীর্থস্থান। এর গুহাগুলো প্রকৃতির এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত এবং এর সাথে যুক্ত ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বাতু কেভকে একটি অনন্য স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছে।












Translate